ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার 70 বছরের বেশি সময় পরও, সাধারণত ভারতীয়রা মনে করেন যে তাদের দেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী আদর্শগুলির অন্তত একটিকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে: পিউ রিসার্চ সেন্টাররের একটি নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, এটি হল ভারত এমন একটি সমাজ যেখানে একাধিক ধর্মাবলম্বীরা নির্দ্বিধায় জীবনযাপন ও ধর্মচর্চা করতে পারে।
ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী বৈচিত্রপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ধর্মপরায়ণও। ভারতে কেবল বিশ্বের বেশিরভাগ হিন্দু, জৈন এবং শিখই বসবাস করে না, এটি বিশ্বের একটি বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং কোটি কোটি খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও আবাসস্থল।
2019 সালের শেষের দিক থেকে 2020 সালের প্রথম দিকে (কোভিড -19 অতিমারী শুরুর আগে) 17 টি ভাষার প্রায় 30,000 প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ভারত জুড়ে ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কিত একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী অধিকাংশ ভারতীয় তাদের ধর্মবিশ্বাস স্বাধীনভাবে অনুশীলন করতে পারেন।
ভারতীয়রা ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে তাদের জাতীয়তার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে দেখেন। প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির বেশিরভাগ অনুসারী বলেছেন যে, “সত্যিকারের ভারতীয়” হতে গেলে সকল ধর্মকে সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং সহনশীলতা ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি একটি নাগরিক মূল্যবোধও: ভারতীয়রা সবাই একমত যে, অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন তাদের নিজ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার শর্তেরই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই সম্মিলিত মূল্যবোধগুলির পাশাপাশি সকল ধর্মাবলম্বীদের আরও অনেক বিশ্বাসও রয়েছে। ভারতে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাই (77%) কর্মফলে বিশ্বাসী তা নয়, বরং সমান সংখ্যক মুসলমানও কর্মফলে বিশ্বাস করেন। ভারতে 81% হিন্দুর মত এক তৃতীয়াংশ (32%) খ্রিস্টানও বলেছেন যে তারা গঙ্গা নদীর শুদ্ধিকরণ শক্তিতে বিশ্বাসী, যা হিন্দু ধর্মের একটি মূল বিশ্বাস। উত্তর ভারতে, 12% হিন্দু , 10% শিখ, এবং 37% মুসলমান সুফিবাদে বিশ্বাসী, যা ইসলামের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত একটি আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য। এবং সকল প্রধান ধর্মে বিশ্বাসী বিপুল সংখ্যক ভারতীয় বলেছেন যে, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, নির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিশ্বাস অভিন্ন হলেও এবং একই সংবিধানের আওতায় একই দেশে বসবাস করলেও, ভারতের প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত জনগণ সাধারণত মনে করেন যে, তাদের একে অপরের সাথে খুব একটা মিল নেই। বেশিরভাগ হিন্দু মুসলমানদের থেকে নিজেদেরকে অনেক আলাদা (66%) করে দেখেন। একই মনোভাব পোষণকারী বেশিরভাগ মুসলমানও বলেছেন যে, তারা হিন্দুদের থেকে অনেকটাই আলাদা (64%)। এর কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে: দুই তৃতীয়াংশ জৈন এবং প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিখ বলেন যে, হিন্দুদের সাথে তাদের অনেক মিল রয়েছে। তবে সাধারণত ভারতের প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত জনগণ নিজেদেরকে অন্যেদের থেকে অত্যন্ত আলাদা করে দেখেন।
ভিন্নতার এই ধারণা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও অভ্যাসের ভিন্নতায় প্রতিফলিত হয়, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর বহু ভারতীয় বলেছেন যে, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীতে বিয়ে করা থেকে বিরত রাখা খুবই জরুরি। ভারতে হিন্দুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হিন্দু নারীদের (67%) বা হিন্দু পুরুষদের জন্য (65%) আন্তঃধর্ম বিবাহ রোধ করতে চান। মুসলমানদের আরও বড় অংশ একইরকম মনে করেন: 80% মুসলমান বলেছেন যে, মুসলমান নারীদের জন্য তাদের ধর্মের বাইরে বিয়ে বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং 76% বলেছেন যে, মুসলমান পুরুষদের জন্যও তা বন্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও ভারতীয়রা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। এটি কেবল হিন্দু এবং মুসলমানদের ক্ষেত্রেই সত্য নয়, শিখ ও জৈনদের মতো ছোট ধর্মীয় গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এটি সত্য। একটি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (সার্বিকভাবে 86% ভারতীয়, হিন্দুদের 86%, মুসলমানদের 88%, শিখদের 80%, এবং জৈনদের 72%) বলেছেন যে, তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বা পুরোপুরি তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত। এসব বিবেচনায়, ভারতীয় সমাজ ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে পৃথক্করণের স্পষ্ট রেখাযুক্ত একটি “জোড়াতালি দেওয়া কাপড়ের” (প্যাচওয়ার্ক ফ্যাব্রিক) মতো।
স্বল্পসংখ্যক ভারতীয় এমনকি এটাও বলেছেন যে, প্রতিবেশী হিসেবে তারা কেবল তাদের নিজস্ব ধর্মাবলম্বীদেরকেই চান। অনেকেই বিশেষ ধর্মাবলম্বীদেরকে তাদের আবাসিক এলাকা বা গ্রাম থেকে দূরে রাখতে চান। উদাহরণস্বরূপ, অনেক হিন্দু (45%) অন্যান্য ধর্মের প্রতিবেশীদের সাথে থাকতে অসুবিধা বোধ করেন না–সেটি মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ বা জৈন যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন। একই পরিমাণ হিন্দু (45%) বলেছেন যে, তারা এই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্তত একটির অনুসরণকারীদের প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নন। এর মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের বেশি (36%) হিন্দু ধর্মাবলম্বী রয়েছেন যারা প্রতিবেশী হিসাবে কোনও মুসলমানকে চান না। জৈনদের বেশিরভাগ (61%) বলেছেন যে, তারা এই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্তত একটিকে প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণ করতে চান না, যার মধ্যে 54% বলেছেন যে তারা মুসলমানকে প্রতিবেশী হিসেবে মেনে নেবেন না।
অতিরিক্ত মূল ফলাফল সমূহ:
- সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং ভারতীয় জাতীয় পরিচয়কে ঘনিষ্ঠভাবে এক করে দেখেন: প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হিন্দু (64%) বলেছেন যে, “সত্যিকারের” ভারতীয় হওয়ার জন্য হিন্দু হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- বেশিরভাগ হিন্দু (59%) হিন্দি (ভারতের বেশ কয়েক ডজন ভাষার মধ্যে একটি) বলার সক্ষমতার সাথে ভারতীয় হিসাবে পরিচিতি এক করে দেখেন। এবং তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়ের এই দুটি দিক — হিন্দি বলতে সক্ষমতা এবং হিন্দু হওয়া — খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। হিন্দুদের মধ্যে যারা বলেছেন যে সত্যিকারের ভারতীয় হওয়ার জন্য হিন্দু হওয়াটা খুবই জরুরি, তাদের 80% এটাও বলেছেন যে, সত্যিকারের ভারতীয় হওয়ার জন্য হিন্দি বলাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সার্বিক বিবেচনায়, আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয় বৈচিত্র্যকে নেতিবাচক হিসাবে না দেখে ইতিবাচক হিসাবে দেখেন: ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অর্ধেক (53%) বলেছেন যে, ভারতের ধর্মীয় বৈচিত্র্য দেশের পক্ষে সুবিধাজনক, যদিও প্রায় এক চতুর্থাংশ ভারতীয় (24%) বৈচিত্র্যকে ক্ষতিকর হিসাবে দেখেন। এই সংখ্যাটি হিন্দু এবং মুসলমান উভয়ের মধ্যে একই।
- ভারতের মুসলমানদের প্রায় সবাই বলেছেন যে, তারা ভারতীয় হতে পেরে খুবই গর্বিত (95%), এবং তারা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি প্রবল উৎসাহ প্রকাশ করেন: 85% এই উক্তিটির সাথে একমত যে, “ভারতীয়রা নিখুঁত নন, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।”
- প্রায় এক চতুর্থাংশ মুসলমান দাবি করেছেন যে, তাদের সম্প্রদায় ভারতে “ব্যাপক” বৈষম্যের সম্মুখীন হন (24%)। নিজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য দেখা মুসলমানদের প্রায় সমপরিমাণ হিন্দুও একই কথা বলেছেন যে, হিন্দুরা ভারতে ব্যাপক ধর্মীয় বৈষম্যের সম্মুখীন (21%)।
- শিখরা তাদের ভারতীয় পরিচয় নিয়ে ব্যাপকভাবে গর্বিত। শিখদের প্রায় সবাই বলেছেন যে, তারা ভারতীয় (হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত (95%), এবং তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (70%) বলেছেন, যারা ভারতকে অসম্মান করেন তারা শিখ হতে পারেন না। ভারতের অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর মত বেশিরভাগ শিখ তাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্যের প্রমাণ দেখতে পান না — কেবলমাত্র 14% শিখ বলেছেন যে, শিখরা ভারতে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার।
- অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তুলনায় শিখরা বেশি হারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে দেশের একটি বড় সমস্যা হিসাবে দেখেন। 65% হিন্দু ও মুসলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে একটি প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করলেও, প্রায় প্রতি দশ জনের মধ্যে প্রায় আটজন শিখ (78%) এটিকে একটি প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখেন।
- সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ভারতীয়ই দেশে ব্যাপক জাতিগত বৈষম্য রয়েছে বলে মনে করেন না। মাত্র পাঁচজনের মধ্যে একজন ভারতীয় বলেছেন যে, তফসিলি সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে, 19% বলেছেন যে তফসিলি উপজাতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান এবং এর কিছু কম সংখ্যক উত্তরদাতা (16%) অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর বিরুদ্ধে উচ্চ মাত্রার বৈষম্য লক্ষ্য করেছেন। তফসিলি সম্প্রদায় এবং তফসিলি উপজাতির সদস্যরা অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি হারে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন।
- অন্যান্য সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ ভারতীয় বলেছেন যে, তারা তফসিলি সম্প্রদায়ের কাউকে প্রতিবেশী (72%) হিসাবে পেতে দ্বিধান্বিত নন। তবে সার্বিকভাবে ভারতীয়দের একটি বৃহৎ অংশ (70%) বলেছেন যে, তাদের বেশিরভাগ বা সব ঘনিষ্ঠ বন্ধুই নিজ জাতের।
- সামগ্রিকভাবে, 64% ভারতীয় বলেন যে, তাদের সম্প্রদায়ের নারীদের অন্য জাতে বিয়ে বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায় একই শতাংশ (62%) বলেন যে, তাদের সম্প্রদায়ের পুরুষদের অন্য জাতে বিয়ে বন্ধ করা খুবই জরুরি।
- সব প্রধান ধর্মাবলম্বীদেরই বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয় বলেছেন যে, ধর্ম তাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং প্রতিটি প্রধান ধর্মের অনুসরণকারীদের কমপক্ষে তিন-চতুর্থাংশ বলেছেন যে, তারা তাদের নিজস্ব ধর্ম এবং এর চর্চা সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। হিন্দুদের তূলনায় ভারতীয় মুসলমানরা তাদের জীবনে ধর্মকে কিছুটা বেশী হারে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন (91% বনাম 84%)। সামান্য কিছু বেশি হারে মুসলমানরা হিন্দুদের চেয়ে নিজের ধর্ম সম্বন্ধে অনেক কিছু জানেন বলে মনে করেন (84% বনাম 75%)।
- প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিদিন প্রার্থনা করেন । তবে খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রার্থনা করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি (77%),যদিও ছয়টি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিস্টানদের জীবনে ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম (76%)। বেশিরভাগ হিন্দু এবং জৈনও প্রতিদিন (যথাক্রমে 59% ও 73%) প্রার্থনা করেন এবং তারা বাড়িতে বা মন্দিরে প্রতিদিন (57% ও 81%) পূজা দেন।
- প্রায় সকল ভারতীয়ই বলেছেন যে, তারা ঈশ্বরে (97%) বিশ্বাস করেন এবং বেশিরভাগ ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রায় 80% মানুষ বলেছেন যে, তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়ে একেবারেই নিশ্চিত। এর প্রধান ব্যতিক্রম হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা, যাদের এক-তৃতীয়াংশ বলেছেন যে, ঈশ্বরে তাদের বিশ্বাস নেই। তথাপি, বৌদ্ধদের মধ্যে যারা ঈশ্বর আছেন বলে মনে করেন, তাদের বেশিরভাগ বলেছেন যে, তারা তাদের বিশ্বাসে একেবারেই অটল।
- যদিও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ভারতে প্রায় সর্বজনীন, সমীক্ষাটি ভারতীয়রা যে ধরনের দেব-দেবীর উপর বিশ্বাস করে সে সম্পর্কে মতের বিভিন্নতা খুঁজে পেয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত মতটি হল ঈশ্বর এক, যার “বহু প্রকাশ” (54%) রয়েছে। তবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ স্পষ্টভাবে বলেছেন: “ঈশ্বর এক” (35%)। খুব কম সংখ্যক মানুষই বলেছেন যে একাধিক স্রষ্টা রয়েছে (6%)।
- সমীক্ষায় ঈশ্বরে উপর বিশ্বাসী ভারতীয় হিন্দুদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তারা নিজেদেরকে কোন ঈশ্বরের নিকটতম বলে মনে করেন। বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু একাধিক ঈশ্বর বেছে নিয়েছিলেন অথবা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাদের অনেক ব্যক্তিগত দেবতা রয়েছে (84%)। এটি কেবল অনেক ঈশ্বরের প্রতি (90%) বা এক ঈশ্বরের বহু প্রকাশে (87%) বিশ্বাসী হিন্দুদের বেলায়ই সত্য তা নয়, যারা একেশ্বরবাদী তাদের বেলাতেও (82%) এটি সত্য। হিন্দুরা যে দেবতাকে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন তিনি হলেন শিব (44%)। এছাড়াও, প্রায় এক তৃতীয়াংশ হিন্দু হনুমান বা গণেশের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করেন (যথাক্রমে 35% ও 32%)।
- অনেক ভারতীয় যে বিশ্বাসগুলি তাদের ধর্মীয় মতের সঙ্গে প্রথাগতভাবে সংযুক্ত নয় তা সাদরে গ্রহণ করেন: ভারতের মুসলমানদের অনেকেই হিন্দুদের অনুরূপ কর্মফলে বিশ্বাস করেন (হিন্দু ও মুসলমান উভয়রেই 77%), এবং 54% ভারতীয় খ্রিস্টানও একই মত পোষণ করেন। প্রায় দশ জনের মধ্যে তিনজন মুসলমান ও খ্রিস্টান বলেছেন যে, তারা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন (যথাক্রমে 27% এবং 29%)।
- বেশিরভাগ মুসলিম ও খ্রিস্টান বলেছেন যে, তারা দিওয়ালী উৎসবে অংশ নেন না, যা প্রথাগতভাবে হিন্দু, শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা উদযাপিত ভারতীয় আলোর উৎসব। তবে বেশ কিছু খ্রিস্টান (31%) ও মুসলমান (20%) সংখ্যালঘু বলেছেন যে,তারা দিওয়ালী উদযাপন করেন।
উপরিউক্ত ফলাফল পিউ রিসার্চ সেন্টার দ্বারা জাতীয়ভাবে 29,999 প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়দের উপর সরাসরি পরিচালিত সমীক্ষার মূল ফলগুলির অন্যতম। স্থানীয় সাক্ষাৎকার গ্রহীতারা 17 নভেম্বর 2019 থেকে 23 মার্চ 2020 তারিখের মধ্যে 17টি ভাষায় সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছিলেন। সমীক্ষাটি মণিপুর এবং সিকিম (যেখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া কোভিড-19 পরিস্থিতির কারণে 2020 সালের বসন্তে ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু করা যায়নি) এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাক্ষাদ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি ব্যতীত (এই অঞ্চলগুলি ভারতীয় জনসংখ্যার প্রায় 1%-এর এক চতুর্থাংশের আবাসস্থল) ভারতের সকল রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিচালিত হয়েছিল। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে সমীক্ষার আওতাভুক্ত ছিল, যদিও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে কাশ্মীর অঞ্চলে কোনও ফিল্ড ওয়ার্ক করা হয়নি। 29,999 উত্তরদাতার সম্পূর্ণ নমুনার স্যামপ্লিং ত্রররটি (sampling error) হল কমবেশী 1.7 শতাংশ। সমীক্ষাটি কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল সে সম্পর্কে আরও তথ্য প্রতিবেদনের গবেষণা পদ্ধতি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন রিপোর্টের অবশিষ্টাংশে আরও বিশদভাবে সমীক্ষাটির ফলাফলগুলি দেওয়া হয়েছে। অধ্যায় 1-এ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বৈষম্য সম্পর্কে ভারতীয়দের অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যায় 2-এ ভারতে ধর্মীয় বৈচিত্র্য এবং বহুত্ববাদ বিষয়ে গবেষণার ফলাফল প্রদান করা হয়েছে। অধ্যায় 3-এ ধর্মীয় বিভাজন এবং আন্তঃধর্ম বিবাহ সম্পর্কে ভারতীয়দের মতামত খতিয়ে দেখা হয়েছে। অধ্যায় 4-এ জাতের ব্যাপারে ভারতীয় মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যায় 5-এ ভারতে ধর্মীয় পরিচয়ের উপাদানগুলি অন্বেষণ করা হয়েছে। অধ্যায় 6-এ ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকাটি আরো ঘনিষ্ঠভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে। অধ্যায় 7-এ ভারতে ধর্মীয় চর্চার বিবরণ প্রদান করা হয়েছে। অধ্যায় 8-এ শিশুদের মাঝে কীভাবে ধর্ম ছড়িয়ে দেওয়া হয় সে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যায় 9-এ ধর্মীয় পোশাক-আশাক বিষয়ক সমীক্ষার ফলাফলগুলির বিশদ আলোচনা রয়েছে। অধ্যায় 10-এ খাদ্য এবং ধর্মের সম্পর্কটি তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যায় 11-তে ভারতে ধর্মীয় বিশ্বাসগুলি সম্পর্কে অন্বেষণ করা হয়েছে। অধ্যায় 12-তে ঈশ্বর সম্পর্কে ভারতীয়দের বিশ্বাস বর্ণনা করা হয়েছে।
দ্য পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়িত এই গবেষণা ধর্মীয় পরিবর্তন এবং বিশ্বজুড়ে সমাজগুলিতে এর প্রভাব বোঝার জন্য পিউ রিসার্চ সেন্টার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।
পিউ রিসার্চ সেন্টার হল একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট ট্যাঙ্ক (fact tank) যা বিশ্বকে প্রভাবিত করা সমস্যা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রবণতাগুলি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে। এটি নীতিগত কোন অবস্থান গ্রহণ করে না। সেন্টারটি এটির মূল অর্থায়নকারী দ্যা পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর একটি সাবসিডিয়ারি।
ইংরেজিতে সম্পূর্ণ রিপোর্টটি পড়তে, এখানে যান: https://legacy.pewresearch.org/religion/2021/06/29/religion-in-india-tolerance-and-segregation
হিন্দিতে রিপোর্টটির সংক্ষিপ্তসার পড়তে, এখানে যান: https://legacy.pewresearch.org/religion/wp-content/uploads/sites/7/2021/06/PF_06.29.21_India_overview_Hindi.pdf
অনুসন্ধানের ফলাফলের এই সারাংশটি মূল ইংরেজি সংস্করণ থেকে বাংলায় অনূদিত।